রবিবার, 6 জুলাই 2025 | [bangla_date]
  1. বিশেষ সংবাদ
  2. বাংলাদেশ
  3. রাজধানী
  4. শিক্ষা
  5. রাজনীতি
  6. আন্তর্জাতিক
  7. বাণিজ্য
  8. বিনোদন
  9. খেলাধুলা
  10. প্রযুক্তি
  11. জীবনযাপন
  12. আইন অঙ্গন
  13. ভিডিও
  14. মতামত
  15. সম্পাদকীয়

ক্ষতিকর বালাইনাশকের বিকল্প ব্যবহার নিয়ে বাকৃবি গবেষকদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা

আসিফ ইকবাল, বাকৃবি প্রতিনিধি
আসিফ ইকবাল, বাকৃবি প্রতিনিধি
রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫ - ৪:৪৫ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের কৃষি এখন গভীর সংকটের মুখে। খাদ্যের চাহিদা বাড়লেও পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে, যার অনেকগুলো আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ হলেও দেশে এসব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকরা নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত বা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক একসাথে প্রয়োগ করায় খাদ্যশস্যে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি বেড়ে যাচ্ছে, যা মানুষের শরীরে জমে ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা, হরমোনজনিত জটিলতা এবং বন্ধ্যাত্বের মতো ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এতে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, পানি দূষিত হচ্ছে এবং মাছ, মৌমাছি, গবাদিপশুসহ অন্যান্য উপকারী প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার কারণে দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতও হুমকির মুখে পড়ছে। যদিও আইন-নিয়ম রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। এ সংকট কাটাতে এখনই কৃষকদের সচেতন করা, তাদের দক্ষতা বাড়ানো, পরিবেশবান্ধব বিকল্প কৃষি পদ্ধতি চালু করা এবং সরকারি তদারকি আরও জোরদার করা জরুরি।

 

এসব বিষয়ে দেশের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে কীটনাশকের ভয়াবহ প্রভাব, বিকল্প সমাধান এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল এবং ভেটেরিনারি অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।

 

বালাইনাশকের ধরণ নিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, বাংলাদেশে কৃষিতে ছত্রাকনাশক, কীটনাশক ও আগাছানাশক একত্রে বালাইনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ছত্রাকনাশকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি—প্রায় ৪৫ থেকে ৪৬ শতাংশ। এরপর রয়েছে কীটনাশক (৩৩ শতাংশ) এবং আগাছানাশক (২০-২১ শতাংশ)। পাশাপাশি কৃমিনাশক, ব্যাকটেরিয়ানাশক ও ইঁদুরনাশকও ব্যবহৃত হয়।

 

বালাইনাশক পরিবেশে কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং জীববৈচিত্র্যে কী ক্ষতি করে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শাহজাহান বলেন, কৃষকরা যখন বালাইনাশক প্রয়োগ করেন, সেটি শুধু গাছে নয় বরং মাটিতেও পৌঁছে যায়। পরে বৃষ্টির পানির সাথে মিশে ভূগর্ভস্থ পানি, পুকুর, নালা বা খালের পানি দূষিত করে। কিছু উদ্বায়ী বালাইনাশক বাতাসে মিশে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় অণুজীব বালাইনাশক শোষণ করে খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে। যেসব বালাইনাশকের অর্ধ-জীবনকাল বেশি, সেগুলো দীর্ঘদিন পরিবেশে থেকে দূষণ ছড়ায়। ফলে উপকারী কেঁচো, মাইট, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকসহ অনেক উপকারী প্রাণী মারা যায়, মাটির উর্বরতা কমে, জলজ প্রাণী ও মৌমাছিও ক্ষতির শিকার হয়।

 

বিষাক্ত বালাইনাশকের কারণে খাদ্যশস্যে কী পরিমাণ রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়

এমন প্রশ্নের জবাবে বাকৃবির উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল বলেন, বাংলাদেশে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় সবজিতে। অনেক কৃষক না বুঝেই সবজি চাষে অতিরিক্ত পরিমাণে বালাইনাশক ব্যবহার করেন। সবজি সাধারণত অল্প সময়ের ব্যবধানে চাষ করা হয় এবং অল্প রান্না করে খাওয়া হয়, ফলে বালাইনাশকের প্রভাব বেশি থাকে। মোট পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৩০ শতাংশ সবজিতে বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে। সবজিভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শসায় ৫০ শতাংশ, টমেটোতে ৪০ শতাংশ, বেগুন ও ফুলকপিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, আর বাঁধাকপিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়।

 

বালাইনাশকের বিকল্প হিসেবে কোন কোন প্রযুক্তি বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কার্যকর এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শাহজাহান বলেন, সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম)। শুধুমাত্র জৈব পদ্ধতি সবসময় সম্ভব নয়, তাই বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। জমি প্রস্তুতির পর কিছুদিন ফেলে রাখলে অনেক ক্ষতিকর পোকা আপনাতেই মারা যায়, সঙ্গে জৈব বালাইনাশক বা বায়ো এজেন্ট ব্যবহারে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ‘ট্রাইকোডারমা’ ছত্রাকজাত রোগ দমনে কার্যকর। অণুজীব বালাইনাশক, উদ্ভিদের নির্যাস বা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েও পোকা দমন করা যায়। ফসলের বৈচিত্র্য আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 

বাংলাদেশে বালাইনাশক ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নিয়মের দুর্বল বাস্তবায়ন বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক শাহজাহান। বাজারে অনেক নিম্নমানের ও অনিয়ন্ত্রিত বালাইনাশক সহজে পাওয়া যায়। অনেক সময় চোরাই পথে আনা পণ্যও বাজারে ঢুকে পড়ে যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। দ্বিতীয়ত, দেশে পর্যাপ্ত মনিটরিং বা তদারকি ব্যবস্থা নেই। কৃষকদের সচেতন করা জরুরি এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

 

সরকার যদি ভর্তুকি দেয়, তাহলে বিকল্প প্রযুক্তি কতটা বিস্তৃত হতে পারে এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করতে নীতিনির্ধারকদের কী ভূমিকা থাকতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শাহজাহান বলেন, সরকার ভর্তুকি দিলে জৈব বালাইনাশকের সহজলভ্যতা বাড়বে এবং গবেষকরা মাঠপর্যায়ে কাজ করতে আরও উৎসাহিত হবেন। প্রশিক্ষণ ও কৃষি সম্প্রসারণ জোরদার করলে কৃষকদের সচেতনতা বাড়বে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হবে। বাকৃবির উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব।

 

এদিকে গবাদিপশু এবং মানবদেহের উপর বালাইনাশকের প্রভাব, প্রতিকার এবং উত্তরণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে কথা বলেছেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।

 

গবাদিপশুর শরীরে বালাইনাশক কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, গবাদি পশু কীটনাশকের সংস্পর্শে আসে প্রধানত দুইভাবে, সরাসরি ও পরোক্ষভাবে। সরাসরি সংস্পর্শ ঘটে যখন পশু খোলা পরিবেশে অবস্থান করে এবং বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানো কীটনাশক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। পেস্টিসাইডের মাত্রা যদি পশুর সহনশীলতার বাইরে যায়, তাহলে তাদের শরীরে বিভিন্ন বিষক্রিয়াজনিত উপসর্গ দেখা দেয়।দীর্ঘদিন ধরে বালাইনাশক শরীরে জমলে তা পশুর কিডনি ও লিভারের ক্ষতি করে, মাংসপেশিতে জমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পুরুষ পশুর ক্ষেত্রে স্পার্মাটোজেনেসিস ও নারী পশুর ক্ষেত্রে ওওজেনেসিস বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রজনন ক্ষমতা কমে। এর ফলে পশুর উৎপাদন, মাংসের গুণগত মান ও পরিমাণ, দুধ উৎপাদন কমে যায়। সর্বোপরি দেশের পশুসম্পদ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।

 

কীটনাশক মিশ্রিত খাদ্য বা ঘাস খাওয়ার কারণে গরু, ছাগল বা অন্যান্য প্রাণীর দুধ ও মাংসে কী ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক জমে থাকে

এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শফিকুল বলেন, কৃষি খাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বালাইনাশকের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন অরগানোফসফেট, অরগানোক্লোরিন, কার্বামেট, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো যেসব বালাইনাশক যেগুলোর লিপিডের প্রতি আকর্ষণ বা জমে থাকার প্রবণতা বেশি। এসব বালাইনাশক সহজে শরীর থেকে বের হয় না এবং গবাদি পশুর মাংস, দুধ ও ডিমে জমে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে। দুধ ও ডিমের মাধ্যমে কিছু বালাইনাশক বের হলেও, মাংসে এগুলো বেশি জমে থাকে। এগুলো দীর্ঘদিন শরীরে থেকে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে এবং শরীরের অ্যামিনো অ্যাসিড সিকোয়েন্সে পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

 

এসব রাসায়নিক গবাদিপশু হয়ে মানুষের শরীরে পৌঁছালে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে

এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শফিকুল বলেন, বালাইনাশক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা মানবদেহের জন্য একেবারে অচেনা বা ‘ফরেন সাবস্ট্যান্স’। এসব কখনোই শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান নয় বরং এগুলো টক্সিক রাসায়নিক যা সরাসরি বা খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতি করে। এসব রাসায়নিক শরীরে জমে কোষে মিউটেশন ঘটায় যা ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে তোলে। বলা হয়ে থাকে, অন্যান্য সাধারণ টক্সিক উপাদানের তুলনায় বালাইনাশকের মিউটেশন ক্যাপাসিটি ৫১ থেকে ৯১ গুণ বেশি যা অত্যন্ত ভয়াবহ। এছাড়া এসব রাসায়নিক শরীরে ঢুকে চর্বি বা ফ্যাট টিস্যুতে জমা হয়, ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে, লিভার ও কিডনিকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করায় শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বোন ম্যারো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও রক্ত উৎপাদন ব্যাহত হয়, স্পার্ম ও ডিম্বাণু উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রজনন ক্ষমতা ব্যাহত হয়।

 

সবশেষে অধ্যাপক শফিকুল বলেন, গবেষণা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ এবং জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকি মুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকারকে গবেষণায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও গবেষণামুখী করতে হবে।

সর্বশেষ - বিশেষ সংবাদ

আপনার জন্য নির্বাচিত

বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস: নিরাপদ মা, সুস্থ জাতি গঠনের অঙ্গীকার

সাবেক এমপি আবুল আজিজের জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে প্রেরণ

যশোর মেডিকেলে ইন্টার্ন ডাক্তারদের নেতৃত্বে স্বৈরাচার সরকারের ডা. ইমাম, নতুন কমিটি দাবি

পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে ইসলামি ছাত্র শিবিরের সপ্তাহব্যাপী গণইফতার কর্মসূচি

নাগেশ্বরীতে উপজেলা প্রশাসনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মনিটরিং

নোবিপ্রবিতে উপ-উপাচার্য নিয়োগ

বাংলাদেশে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও লিংকন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত

সিরাজগঞ্জের ফুলজোড় নদীতে নিখোঁজ হওয়া ০৩ বন্ধুর মরদেহ উদ্ধার

মাধবপুরে সেনা অভিযানে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ও ৬৯টি মোবাইল সহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক